মানবদেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, রোগ ক্ষুধা নিরাময়সহ নিবারণের জন্য খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। শারীরিক পরিশ্রেমের ফলে দেহের যে শক্তি ব্যয় হয় তা পূরণের জন্য খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক। শরীরের জন্য মোট ছয়টি খাদ্য উপাদান দরকার। এগুলো হলো শ্বেতসার, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, লবণ ও পানি।
* শ্বেতসার বা শর্করা জাতীয় খাবার : চাল, আটা, ময়দা,আলু, গুড়, চিনি ইত্যাদি শ্বেতসার জাতীয় খাবার।
* আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার : মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বরবটির বীজ, বিভিন্ন প্রকার ডাল যেমন মসুর, মুগ, ছোলা ইত্যাদি আমিষ জাতীয় খাবার।
* চর্বি বা স্নেহজাতীয় খাবার : ঘি, মাখন, তেল, চর্বি ইত্যাদি স্নেহজাতীয় খাবার।
* ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ : খাদ্যে এমন কিছু জৈব পদার্থ আছে যা স্বাস্থ্যার জন্য প্রয়োজন। দ্রবণীয়তার ওপর ভিত্তি করে ভিটামিনকে দুভাগে ভাগ করা হয় । ১। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন বি কমপ্লেক্স এবং ২। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, যেমন ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ইত্যাদি।
* খনিজ লবণ : দেহের গঠান ও অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণে খনিজ লবণ অপরিহার্য। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, লোহা, সালফার ইত্যাদি খনিজ লবণ। যকৃত, দুধ, ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি ও ফল থেকে খনিজ লবণ পাওয়া যায়। খনিজ লবণ বা আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড, রক্তশূন্যতা এবং ক্যালসিয়ামের অভাবে রিকেট রোগ হয়। ক্যালসিয়াম দেহের হাড়, দাঁত শক্ত ও মজবুত রাখে। হাড়ের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য দৈনিক ৬০০-৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার।
* জিংক : জিংক ত্বককে সুস্থ রাখে। হাড়কে শক্ত করে। মাংস, ডিম, বাদাম, কুমড়ার বিচি, গুড় ইত্যাদি জিংক আছে।
* পানি : সব খাদ্যে কমবেশি পানি থাকে। খাদ্য গ্রহণ, পরিপাক ও শোষণ করতে পানির প্রয়োজন। পানি রক্ত তরল রাখে এবং মলমূত্রের সাথে দূষিত পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়। মানুষের দেহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পানি। পানির অভাবে হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
সুষম খাবার
যে খাদ্যে শর্করা, চর্বি, আমিষ, ভিটামিন, লবণ ও পানি এই ছয়টি উপাদান পরিমাণমতো ও সঠিক অনুপাতে থাকে তাকে আমরা সুষম খাবার বলি। যেকোনো খাদ্য ক্ষুধা মেটাবে ঠিকই কিন্তু প্রয়োজন মতো উপাদান না থাকলে তাকে সুষম খাবার বলা যাবে না। এজন্য প্রত্যেক মানুষের বয়স, শারীরিক কাঠামো ও উচ্চতা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা রয়েছে। পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে এ তালিকা জেনে সুষম খাবার গ্রহণ করাই ভালো। যে খাদ্যে এই প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদানের এক বা একাধিক উপাদান কম থাকে তাকে অসম খাদ্য বলে।
ভেজাল বা বাসি পচা খাবার
খাদ্য সঠিক উপায়ে সংরণ না করা, বাসি পচা এবং ভেজাল পণ্য দিয়ে রান্না করা খাবার গ্রহণ করলে নানা অসুবিধা হতে পারে। হলুদে ইটের গুঁড়া মেশানো, মাছে ফরমালিন, শাকসবজি ও ফলমূলে দূষিত রঙ মেশানো, তেলে উচ্চমাত্রার এসিড জাতীয় কেমিক্যাল মেশানো স্বাস্থ্যের জন্য তিকর। পচা-বাসি খাবারে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয়। ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা খাদ্যদ্রব্য দূষিত বা নষ্ট হয়ে থাকে। একই ফ্রিজে নানা ধরনের খাদ্য উপাদান একসাথে রাখলেও খাবার নষ্ট হতে পারে। তাই প্রতিটি খাদ্য গ্রহণের পূর্বে খাদ্যটি বাসি বা পচা কিনা যাচাই করে তবেই খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।